জামদানীর যত্ন
বাঙ্গালি নারী এবং শাড়ী সেই আবহমান কাল থেকেই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। প্রিয় এক একটা শাড়ীর সাথে জড়িয়ে থাকে অনেক মধুর স্মৃতি। তাই প্রতিটি শাড়ীই আমাদের কাছে মহা মূল্যবান।
তবে শাড়ি অনেক প্রিয় হলেও এগুলো নিয়মিত পরা সম্ভব হয়ে ওঠে না কর্মব্যস্ত জীবনে। নিয়মিত পরা হয়ে ওঠেনা বলেই শাড়ী গুলোর জায়গা হয় আলমারি বা ওয়ারড্রবে। কিন্তু যেন তেনভাবে রেখে দিলেও আরেক বিপদ, ক’দিন পরই দেখা যায় শখের প্রিয় শাড়ী গুলো সব ভাঁজে ভাঁজে ফেঁসে গিয়েছে, নাহয় ফাঙ্গাস পরে একাকার অবস্থা দাঁড়িয়েছে।
তাই শুধু শাড়ী যত্ন করে পরলেই হবে না, খুব যত্ন সহকারে এদের কে তুলে রাখতে হবে আলমারি বা ওয়ারড্রবে।
যেমন ধরুন জামদানি শাড়ী’র কথা। আমাদের প্রিয় জামদানি শাড়ী যেমন ঐতিহ্যের দিক দিয়ে সেরা, তেমনি এর যত্নটাও নিতে হয় খুব নিখুঁতভাবে। তা না হলে শুধু ভাঁজ করে রেখে দিলে ক’দিন পর ভাঁজ খুলে নষ্ট হওয়া শাড়ীটি দেখে মুখ ভার করে বসে থাকতে হবে।
জামদানি সাধারনত দুই ধরনের হয়ে থাকে, সুতি ও হাফসিল্ক। আর এক ধারণের জামদানি আজকাল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলো নাইলন সূতা দিয়ে বানানো হয় এবং সেগুলোর মূল্যও হয় ১ হাজার টাকা বা এর নিচে। এগুলো এম্নিতেই ক’দিন পর ফেঁসে যায়, তাই এই নিম্ন মানের জামদানির যত্ন নিয়ে কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করছিনা আমি। আমি আজ বলবো হাফসিল্ক ও সূতি জামদানির যত্ন নিয়ে।
আমরা তো জানিই যে জামদানি শাড়ির জমিন এবং ডিজাইন পুরোটা সুতা দিয়ে তাঁতের মাধ্যমে হাতে বোনা হয়ে থাকে। তাই এর দাম তাও অন্য শাড়ীর তুলনায় একটু বেশী। তবে জামদানি শাড়ির দাম নির্ধারণ করা হয় এর ডিজাইন ও সূতার বুননের ওপর।
হাফসিল্কের জামদানি শাড়িগুলোই আসলে অরিজিনাল জামদানি। রেশম সূতা গুলোও ৩ ধরণের হয়ে থাকে। যে শাড়ী গুলো ৩-৫ হাজার টাকার মধ্যে সেগুলোতে এক ধ্রণের রেশম সূতা দেয়া হয়। যেগুলো ৬-৮ হাজারের, সেগুলোতে মধ্যম মানের আর যে গুলো ৯ থেকে শুরু হয়, শে গুলোতে উন্নত মানের রেশম ব্যবহার করা হয়। এগুলোতে রেশম ও কটন সূতা ব্যবহার করা হয় আর মোটিফ অর্থাৎ যে কাজ গুলো করা হয়, সেগুলোও করা হয় উন্নতমানের সূতা দিয়ে। তাই এই শাড়ী গুলোর ব্যাপারে খুব যত্নশীল হতে হয়।
আসুন জেনে নিন কীভাবে জামদানি শাড়ীর যত্ন নিতে হবেঃ
✤ জামদানি শাড়ি ব্যবহারের পর ভাঁজ করে অনেক দিন রেখে দিলে তা ভাঁজে ভাঁজে ফেঁসে যেতে পারে। আবার হ্যাঙ্গারে করে ঝুলিয়ে রাখলেও শাড়ি মাঝখানে ফেটে যায়। তাই জামদানি শাড়ি হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে বা ভাঁজ করে না রাখতে নেই। রোল করে রাখতে পারেন কোন শক্ত কাঠের ঊপর, যেভাবে রাখা হয় থান কাপড়। এভাবে রাখলে জামদানি কখনোই নষ্ট হবে না।
✤ জামদানি শাড়ি অন্যান্য সাধারণ শাড়ির মতো ঘরে ধুলে নষ্ট হয়ে যাবে নিশ্চিত। তাই ঘরে না ধুয়ে ড্রাইওয়াশ করানো ভালো। এ ছাড়া সবচেয়ে ভালো হয় জামদানি শাড়ি কাটা করালে। এ ক্ষেত্রে যারা জামদানি তৈরি করেন তারাও এ কাজটি করে থাকেন। কাটা করিয়ে নিলে আপনার শখের জামদানি শাড়িটি অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকবে।
✤ কিছুদিন পর পর শাড়ী গুলো খুলে রোদে দিয়ে ভালো করে বাতাসে ঠান্ডা করে আবার যত্ন সহকারেই আলমারিতে রেখে দেবেন। মনে রাখবেন রোদ থেকে এনে সাথে সাথেই তা আলমারিতে ঢুকিয়ে রাখলে আপনার শাড়ীটি আর ভালো থকার সম্ভাবনা নেই।
✤জামদানি পরার পর যদি কোন দাগ পড়ে যায়, তাহলে তা নিজের হাতে ঘসে ঘসে না উঠিয়ে সেখানে ট্যালকম পাউডার ছিটিয়ে দিন, তারপর ড্রাই ক্লিনিং এ দিন।
✤জামদানির নিচের পাড়ে অবশ্যই ফলস পাড় লাগিয়ে নেবেন কেনার পর পরই, তাহলে ময়লা বা জূতার ঘসাতে নিচের পাড়টা নষ্ট হবে না, টেকসই থাকবে।
✤ সুতি কিংবা হাফ সিল্ক, যা-ই হোক না কেন , কোন ভাবেই জামদানী পানিতে ওয়াশ করতে যাবেন না। আর যদি জুতা’র হিলে, রিক্সায় বা কোনভাবে খোঁচা লেগে শখের জামদানিটি ছিঁড়ে যায়, তাহলে সেটা সুই সুতা দিয়ে ঠিক না করে কোন তাতি’র কাছে দিন, এমনভাবে ঠিক করে দেবে যে আপনি নিজেও ধরতে পারবেন না জামদানী টা কোন জায়গায় ছিঁড়ে গিয়েছিলো।
✤ ৪/৫ বার পরার পরই জামদানী কাটা করিয়ে নেবেন, তাহলে তা ভালো থাকবে। কাটা করা মানে কেটে ফেলা মনে করবেন না, জামদানি বানানোর সময় তাঁতিরা সুতাতে মাড় ব্যবহার করে। কয়েকবার পরার পর সেই মার গুলো নষ্ট হয়ে যায় বলে শাড়িতা নেতিয়ে পড়ে। কাটা করা মানে হলো সেই জামদানিটিতে মাড় প্রয়োগ করা। এটা করলে একদম নতুনের মতো হয়ে যাবে আপনার প্রিয় শাড়িটি।
✤ আলমারি বা চেস্ট আপ ড্রয়ারে লম্বা ভাঁজ করে রাখবেন, যেভাবে ছবিটা দিয়েহচি।
সবাইকে ধন্যবাদ, জামদানি সম্পর্কে জানতে ও আসল জামদানি পেতে চাইলে আমাদের সাথেই থাকুন । মেসেজ করুন আমাদের পেজ এ,
https://www.facebook.com/JamdaniVille/